September 7, 2024, 11:22 pm

গাইবান্ধায় সহিংসতা : দুই মামলায় গ্রেপ্তার ৭৭

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপির ছেলেসহ ১০৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা সহস্রাধিক আসামি করা হয়েছে । মামলায় ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

১৯ জুলাই জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সাকা বাদী হয়ে ৭৪ জনের নাম উল্লেখ করে ২০০-২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ইমারুল ইসলাম সাবিনের ছেলে সৌমিক ও জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি আব্দুর রশিদ সরকারের ছেলে সিজানকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও এর আগে

১৭ জুলাই গাইবান্ধার সদর থানায় পুলিশ বাদি হয়ে “পুলিশের উপর আক্রমণ” এর অভিযোগে ৫০০ থেকে ৭০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা জানান, দুই মামলায় বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীসহ এ পর্যন্ত ৭৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছবি- ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারী অন্যান্য অভিযুক্তদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বুধবার(১৭ জুলাই) সারা দেশের সাথে গাইবান্ধাতেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে নামে গাইবান্ধার শিক্ষার্থীরা। এদিন বেলা ১১ টার দিকে শহরের এক নং রেলগেটে জড়ো হতে থাকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা কাঠ-বাঁশের লাঠি ও বিভিন্ন প্লেকার্ড হাতে নিয়ে শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল শেষ করে এক নম্বর রেলগেট এলাকার রেললাইনের উপর অবস্থান করে। এক পর্যায়ে তারা এক নম্বর রেলগেট দখলে নিয়ে রেল লাইনে গাছের গুড়ি ও রেলপাত ফেলে রেলপথ ও সড়ক পথ বন্ধ করে দেয়। এতে করে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তখনও পর্যন্ত ১ নং ট্রাফিক মোড়ে পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।

পরে বিক্ষোভ আর নানা স্লোগানে দেড় ঘণ্টা যাবত গাইবান্ধা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে ১ নম্বর রেলগেট এলাকায় আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়ে অবস্থান নেন দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাকর্মীরা।

এক পর্যায়ে বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-রেল লাইনের পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময় পুলিশ পিচু হটতে থাকে এবং এক নম্বর ট্রাফিক মোড় ত্যাগ করে। বিক্ষোভ ও বিভিন্ন স্লোগানের মধ্য দিয়ে চলা আন্দোলন দুপুর ১ টার দিকে সহিংস রূপ নেয়। আন্দোলনকারীদের ইট পাটকেল ও লাঠির আঘাতে গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ আওয়ামী লীগের ১২ জন নেত-কর্মী আহত হয়। বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয় চত্বরে থাকা নেতাকর্মীদের ১১ টি ব্যক্তিগত মোটরবাইক ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় বিক্ষোভকারীদের হামলার মুখে আ.লীগ নেতাকর্মীরা অফিস থেকে সরিয়ে গেলে আন্দোলনকারীরা আ.লীগ অফিস কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ। এতে করে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আন্দোলনকারীরা। পরে তারা শহরের বিভিন্ন সড়ক ও রেললাইনে থেকে কিছুক্ষণ পর পর পুলিশের সাথে ইট পাথর নিক্ষেপ করে সংঘর্ষে জড়ায়। পরে পুলিশ-আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যেই ছাত্রলীগ ও আ.লীগের কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীরা শহরে এসে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে তাদের সাথেও কোটা সংস্কারকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন পুলিশ ৫ জন সাংবাদিকসহ অর্ধশত আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে পুলিশ-ছাত্রলীগ কোটা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিলে তারা রেল স্টেশন ও শহরের বিভিন্ন মার্কেট ও স্থাপনায় ঢুকে পড়ে। ঘটনার দেড়ঘণ্টা বিলম্বে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে মোটরসাইকেল গুলো পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর হামলা, অফিস কার্যালয় ভাঙচুর ও নেতাকর্মীদের ১১ টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে দুপুর দেড়টার দিকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে পাল্টা হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা বিএনপি অফিস ভাঙচুর করে এবং অফিসে আগুন দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভায়। পরে একই জেরে একটি প্রতিবাদ মিছিল করে জেলা আ.লীগ। সবশেষ বিকেল ৩ টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে নিশ্চিত করে পুলিশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD