October 18, 2024, 7:35 am

বগুড়ায় শিক্ষার্থী-ছাত্রলীগ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সাতমাথা রণক্ষেত্র

ষ্টাফ রিপোর্টার: রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সাতমাথায় আসলে ছাত্রলীগের সাথে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ব্যাপক ভাংচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরনে সাতমাথা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগ অফিস, বগুড়া টাউন ক্লাবে ভাংচুর, পুলিশ বক্সে ও ৪টি মোটর সাইকেলে আগুন, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনির ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সাতমাথা সমবেত হলে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার মুখে পিছু হটে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের সময় অন্তত ৪টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে ঘটনাস্থলে। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে এক সাংবাদিক এবং এক শিক্ষার্থী আহত হয়। একপর্যায় পুরো সাতমাথা এলাকা শিক্ষার্থীদের দখলে নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। অধিকাংশ আন্দোলনকারীদের হাতে লাঠিসোটা ছিল। ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের দিকে গেলে আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সেখান থেকে মুজিব মঞ্চের সামনে এসে তারা তাদের দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
পুরো সাতমাথায় লাঠিসোঠা নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে আন্দোলনকারীরা। তাদের অবস্থানের কারণে পুরো সাতমাথা এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। সাতমাথা কেন্দ্রীক সবগুলো রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয় আশেপাশের দোকানপাট ও মার্কেট। পাশাপাশি সড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। এমনকি রাস্তা বিভাজে ব্যবহৃত লোহার শিটও তারা ভেঙে ফেলে। ক্রমেই আন্দোলনকারীদের সহিংসতা বেড়ে যায়।
একইদিন সকালে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কলেজের মেইন গেটের সামনে সড়ক অবরোধের পর এ ঘটনা ঘটে। এতে ৪জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।


আহত শিক্ষার্থীরা হলেন-সরকারি আজিজুল হক কলেজের ফিন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের তাফসির, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সুমন রানা, অর্থনীতি বিভাগের ৩য় বর্ষের মামুন ও মিলন। পরে আহত চারজনকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার পর থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
জানা যায়, এদিন সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসের জামিলনগর গেটে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এসময় হঠাৎ দুর্বৃত্তরা কলেজের চত্বরে একটি ককটেলের বিষ্ফোরণ ঘটায়। এতে চারজন আহত হন। পরে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কলেজ ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আহত শিক্ষার্থী তাফসির জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা কলেজের সামনে তিনমাথা সড়ক অবরোধ করি। প্রায় ২০ মিনিট আমাদের অবরোধ কর্মসূচি চলে। কর্মসূচি শেষ করে কলেজ থেকে ফিরছিলাম। এমন সময় ককটেল বিস্ফোরণ করা হলে আমরা দুজনেই আহত হই। এছাড়া আরও দুজন আহত হয়েছেন।

এছাড়া বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এ সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধের ঘণ্টাখানিক পরে মহাসড়ক থেকে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয় জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাতমাথায় অবস্থান করার সময় কোটা আন্দোলকারীরা চারপাশ থেকে হামলা করে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা আন্দোলণের নামে মানুষের ক্ষতিসাধন করছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করছে।এরপর সন্ধ্যার দিকে হামলার প্রতিবাদে যুবলীগ শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে টেম্পল রোডে শহর বিএনপি অফিসে ও নবাববাড়ী রোডে জেলা বিএনপি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুবৃত্তরা।

এরপর সন্ধ্যার দিকে হামলার প্রতিবাদে যুবলীগ শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে টেম্পল রোডে শহর বিএনপি অফিসে ও নবাববাড়ী রোডে জেলা বিএনপি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুবৃত্তরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD